সাজিয়া রহমান:: কয়েক বছর ধরে দেশের বাজারে কোরবানির চামড়ার দর অস্বাভাবিক নিম্নগামী । প্রতি বছর ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে চামড়া ব্যবসায়িদের একটি সিন্ডিকেট চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় এবং বানিজ্য মন্ত্রনালয় সেটায় সায় দিয়ে দেয়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত দ্রব্যের দাম কমছে না, এরপরেও দেশের বাজারে ক্রেতারা কোরবানির চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছে। কুড়ি বছর আগে বাটার যে জুতার দাম ছিলো ৬৯৯ টাকা, এখন তার দাম ৪৯৯৯ টাকার মতো। অথচ দেশে কোরবানির চামড়ার দাম গত ৬/৭ বছর ধরে নিম্নগামী।
এ বছর ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া কিনতে হবে ৪৭-৫২ টাকায়, যা গত বছর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে কিনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এই দর তার আগের বছর বা ২০২০ সালে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কিন্তু বাজারে একটি মাঝারি সাইজের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। যদি এই নির্ধারিত দামেও চামড়া পাওয়া যায় তবে তাও ভালো, কেননা গত বছর কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন বা রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছেন। ছাগলের চামড়া ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবিদ আহসান বলেন স্টার কাবাব বা আল রাজ্জাক হোটেল বা রাব্বানি হোটেলে এক কাপ চায়ের দাম ২০ টাকা। কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকার হকদার গরিব মিসকিন লোকজন। এদের পক্ষ নিয়ে কথা বলার লোক কম। দেশে দরিদ্র লোক আছে সরকার পারলে এটাতো অস্বীকারই করে। এদের অধিকার আদায় না হলে সরকার বা ব্যবসায়ী কার্টেল কারোই কিছু যায় আসে না।
কোরবানীর চামড়ার টাকা এবং ফেৎরার টাকা দিয়ে দেশের হাজার হাজার এতিমের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা হয়। চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসাগুলো বড় ভূমিকা রাখে। মাদ্রাসা গুলো এবছর বার বার অনুমতি চেয়েও ঈদের আগে খোলার অনুমতি পায় নি। ফলে মাদ্রাসাগুলো চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে না। চামড়া সংগ্রাহকরা এবার ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার বড় সুযোগ পেয়েছে। সাধারণ মানুষ চামড়া সংরক্ষণ করে রাখবে না, দিনের শেষে যা পাওয়া যাবে, সেই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হবে।
গত কয়েক বছরে চামড়ার বাজারে অস্থিতিশীলতার পেছনের কারণ হিসাবে চাহিদার তুলনায় বেশি যোগান এবং চামড়া সংরক্ষণের দুর্বলতার কথা বলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
তিনি বলেন, “আগের চেয়ে এখন কোরবানি হচ্ছে বেশি। একদিনে কোরবানি হওয়ার অতিরিক্ত সাপ্লাই থাকে। সে কারণেই দাম ওঠেনা। তাছাড়া, কোরবানি যারা দিচ্ছেন তারা যদি লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে চামড়াটি এতিমখানায় দিতেন তাহলে চামড়া তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকতো, পরে দর কষাকষির সুযোগ থাকতো।”
এদিকে, চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারি কোন ব্যবস্থা না থাকায় এবং পুরো চামড়া খাত বেসরকারি খাতের অধীনে হওয়ায় সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান মি. ঘোষ। “চামড়ার পুরো কাজটাই হয় বেসরকারি খাতে। সরকারিভাবে চামড়া কিনে রাখারও কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য আমরা জোর দিয়েছি লবণ মাখানো এবং স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করার ওপর। সেটা এতিমখানায় হতে পারে, জেলাগুলোয় বিসিকের যদি জায়গা থাকে সেখানেও হতে পারে।”
সরকার প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে এবং জেলা পর্যায়ে চামড়ার সংরক্ষণাগার তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তার কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
গবেষক আসাদুল হক বলেন যেখানে এতিম খানাগুলোর সুযোগসুবিধা অনেক কমেছে সেখানে প্রতিটি ট্যানারী এবং জুতার ফ্যাক্টরীর মালিকদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। তারা কানাডা, অস্টেলিয়ায় সেকেন্ডহোম গড়ে তুলছে।